(বিঃদ্রঃ আমাকে পছন্দ-অপছন্দ যাই করেন, লেখাটা পড়বেন।)
সমসাময়িক বিভিন্ন বিষয় ও ইস্যুতে আমি আত্মসমালোচনামূলক লেখালিখি করি। কিছু বিষয় সামগ্রিক আর কিছু বিষয় দলের অভ্যন্তরীন। এই সব যে লিখি, এতে কি আমি ব্যক্তিগত ভাবে লাভবান হচ্ছি? কোন দিক দিয়ে জনপ্রিয় হচ্ছি? এসব লিখে কি আমি পদ পাচ্ছি? আর্থিক ভাবে লাভবান হচ্ছি? মোটেও না।
বরং দিনকে দিন আমার শত্রু তৈরি হচ্ছে, অনেকের রোষাণলে পড়ছি, অনেকে বিরূপ দৃষ্টিভঙ্গিতে দেখছে বিষয়গুলো।
অনেকে আমার লেখাগুলো ব্যক্তিগত ভাবে নিচ্ছে, অথচ আমার কোন লেখাই কোন নির্দিষ্ট ব্যক্তির উদ্দেশ্যে নয়, বরং কিছু অন্যায় ও অনিয়মের বিরুদ্ধে। যা হয়তো নিজেদের স্বার্থে সাময়িকের জন্য নিজস্ব দৃষ্টিকোণ হতে অন্যায় ও অনিয়ম মনে হচ্ছে না।
এতো সব বুঝার পরও কেনো লিখছি এসব? কেনো এসব লিখে জীবনের ঝুঁকি নিচ্ছি? কারণ না লিখে উপায় নেই, আমাদের পিট দেয়ালে ঠেকে গেছে। কি ভাবছেন? ফ্যাসিবাদের পতন হয়েছে বলেই কি মনে করছেন আপনি আমি আমরা শঙ্কা মুক্ত, দায় মুক্ত, বিপদ মুক্ত, আতংক মুক্ত?
মোটেও না, বরং দিনকে দিন পরিস্থিতি জটিল থেকে জটিল হচ্ছে।
চলমান সময়টা আমাদের প্রত্যেকটা রাজনৈতিক দলের জন্য কঠিন এক পরিক্ষা, পরিক্ষাটা হচ্ছে কারো জন্য জনপ্রিয়তা ও আস্থা ধরে রাখার, আর কারো জন্য জনপ্রিয়তা ও আস্থা তৈরি করার।
দেশের মানুষতো একই, ফলে হচ্ছেটা কি এক দলের জনপ্রিয়তা হ্রাস পেয়ে অন্যদলের জনপ্রিয়তা বাড়ছে, এক দলের উপর হতে আস্থা কমে গিয়ে অন্যদলের উপর আস্থা তৈরি হচ্ছে।
আর এই কাজটা করার জন্য রাজনৈতিক দলগুলো একেকটা একেক রকম কৌশল অবলম্বন করছে। যেমনঃ এই মুহুর্তে দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় দল হচ্ছে বিএনপি, যে দলের উপর জনগণ আস্থাশীল, আর প্রতিপক্ষ রাজনৈতিক দলগুলো তাদের কৌশল হিসেবে কি করছে নানান রকম ষড়যন্ত্র করছে অপপ্রচার চালাচ্ছে যেনো বিএনপির জনপ্রিয়তা হ্রাস পায় আর আস্থা হারায়।
আর এসব ষড়যন্ত্র করার সুযোগ গুলো আমরা নানানভাবে করে দিচ্ছি আমাদের আচার ব্যবহার ও কর্মকান্ডের মাধ্যমে।
আগামী নির্বাচনের মাধ্যমে যদি বিএনপি ক্ষমতায় আসতে না পারে তবে আমরা যারা বিএনপি করি আমাদের কি দশা হবে একটা বার কি ভেবে দেখেছেন! আমরা যখন ক্ষমতাসীন দলের প্রতিপক্ষ হবো তখন সেই ক্ষমতাসীন দল ক্ষমতা দীর্ঘস্থায়ী করার জন্য আমাদের বিরুদ্ধে নানান ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হবে, আবারও আমাদের উপর দমন নিপীড়ন শুরু হবে, বিগত ফ্যাসিস্ট সরকার যা করেছে তার চেয়েও যে কম করবে বা বেশি করবে না সেই নিশ্চয়তা কি কেউ দিতে পারবে? আবারও যে জুলুম নির্যাতন হবে না সেই নিশ্চয়তা কি কেউ দিতে পারবে? যে যা কামাচ্ছেন তা রেখে যে দেশ থেকে আওয়ামীলীগের মতো পালিয়ে যেতে হবে না সেই নিশ্চয়তা কি কেউ দিতে পারবে?
আমরা কিন্তু বিগত সময়ে প্রত্যেকে নির্যাতিত নিপীড়িত, আমরা এই নির্যাতন নিপীড়নের কথা ভুলে গেলে চলবে না।
এইযে আজকের দিনে এসে আমরা নিজেদের ব্যক্তিগত স্বার্থে বিগত সময়ে যারা আমাদের প্রতিপক্ষ ছিলো তাদের আশ্রয়প্রশ্রয় দিচ্ছি তারা কি আমাদের বিগত সময়ে নির্যাতন নিপীড়ন থেকে রক্ষা করতে পেরে ছিলো, আগামীতে যদি বিগত সময়ের একই পরিস্থিতি ঘটে তারা কি পরিস্থিতি সামাল দিয়ে আমাদের নির্যাতন নিপীড়ন হতে রক্ষা করতে পারবে? কখনও পারবে না, বরং তারা এখন যেমন আপনার আমার আশ্রয় নিচ্ছে তখনও যারা ক্ষমতাসীন হবে তাদের আশ্রয়প্রশ্রয় নিবে, তখন আমরা অসহায় হয়ে পড়বো, আপনি আমি যা আজ অনুভব করছি না, তখন তা হারে হারে অনুভব করবো আর এই সময়ের কীর্তিকলাপের জন্য আফসোস করবো। আমরা এখন যা করছি এসব কারণে কি হচ্ছে, নিজেদের মধ্যে মতের অনৈক্য তৈরি হচ্ছে, নিজেদের ভ্রাতৃত্ব নষ্ট হচ্ছে, ঐক্যবদ্ধতা নষ্ট হচ্ছে, একের প্রতি অন্যের বিশ্বাস ও আস্থা নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।
একটা কথা মনে রাখবেন, আওয়ামীলীগ ইতিমধ্যে বলতে গেলে বাংলাদেশের রাজনীতিতে স্টপ, এখন জনপ্রিয় বৃহৎ দল হিসেবে আছে শুধু বিএনপি, যারা ক্ষমতায় যাওয়ার পূর্ণ সামর্থ্য রাখে, এছাড়া এই মুহুর্তে অন্য কোন দলের এই ক্ষমতা বা সামর্থ্য নেই।
তাই বিএনপি এখন দেশীয় এবং আন্তর্জাতিকভাবে চতুর্মুখী ষড়যন্ত্রের সম্মুখীন হচ্ছে প্রতিটি মুহুর্তে।
তাই সাবধান হওয়ার জন্য আমরা নিজেরা সংশোধন হওয়ার জন্য সতর্ক হওয়ার জন্য এসব আলোচনা ও আত্মসমালোচনা করি।
একটা কথা আমাদের সকলেরই কিন্তু মনে রাখা উচিত, আমরা কে কি করছি, কে কি করছি না, সবই কিন্তু প্রশাসন বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা বিভিন্ন সাংবাদিকদের কাছে রেকর্ড হচ্ছে, একটু এদিকওদিক হলেই যে পরিস্থিতি বর্তমান আওয়ামীলীগের মতো হবে না, যে যা কামাচ্ছি যা অর্জন করছি সেসব রেখে পালিয়ে যেতে হবে না সেই নিশ্চয়তা কেউ দিতে পারবে না, তখন কিন্তু আমাদের রক্ষা হবে না।
আশা করছি আমরা সকলেই বিষয়গুলো বুঝার চেষ্টা করবো, বিগত ফ্যাসিস্ট সরকারের নির্যাতন নিপীড়ন ও বর্তমান পরিস্থিতির আলোকে।
পরিশেষে আমার কোন কথায় যদি কেউ কষ্ট পেয়ে থাকেন ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি, আমি কাউকে ব্যক্তিগত ভাবে আঘাত করার উদ্দেশ্যে এসব লেখালিখি করি না, যা করি দেশের স্বার্থে দলের স্বার্থে বৃহৎ ও সামগ্রিক স্বার্থে।
মহান আল্লাহ আমাদের সকলকে বুঝার তৌফিক দান করুক।